সৃষ্টিকর্তা

সৃষ্টিকর্তা ঠিক কোন ধরনের মানুষের ডাকে সাড়া দেয়?

মহাভারত সিরিয়ালটা টিভিতে দেখেছিলাম কয়েক বছর আগে। একটা দৃশ্য এমন ছিলো যেখানে পাঁচ পান্ডব ভাইয়ের এক স্ত্রী দ্রৌপদীর বস্ত্রহরন( উলঙ্গ) করছিলো তার ই ভাসুর দু:শাসন। দ্রৌপদী কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চান ওমনি ভগবান কৃষ্ণ ঝটপট তার আলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে দ্রৌপদীকে উদ্ধার করেন। what a quick service!

ইউসুফ নবী এবং জুলেখার কাহিনী শুনেছিলাম। ইউসুফের রুপে পাগল হওয়া জুলেখা এক রাতে ইউসুফের সাথে যৌনমিলন করার জন্য তাকে একটা ঘরে আটকে রেখেছিলো। ইউসুফ আল্লার কাছে নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য সাহায্যে প্রার্থনা করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা উনার ফরিয়াদ শুনলেন এবং একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে ইউসুফকে ঐ যাত্রা উদ্ধার করেছিলেন। What a lucky guy!

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলোতে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার কারনে তিনি তার সৃষ্টিকে তাৎক্ষনিক সাহায্য কিংবা উদ্ধার করার আরো অনেক উদাহরন দিয়েছেন যাতে মানব জাতি সু:খ-দু:খে তার স্রষ্টাকে ডাকে। সত্যি এগুলো পড়লে কিংবা জানলে মনটা ভালো হয়ে যায়।

যখন ছোট ছিলাম অনেক দুষ্টামী করতাম তাই সারাদিন শুধু ব্যাথা পেতাম। ব্যাথা আমি পেতাম কষ্টগুলো আম্মার চেহারায় ফুটে উঠতো। এখন নিজে বাবা হয়েছি। আমার বাচ্চা কোথাও ব্যাথা পেয়ে এক ফোঁটা রক্ত বের হলে মনে হয় আল্লাহ ঐ ব্যাথাটা আমার শরীরে দিয়ে দিলো না কেনো। সন্তানতো! কোথাও একটা টোকার আঘাত পেলেও মনে হয় কলিজাটা আমার ছিঁড়ে যায়।
আমার এক ভাই একবার বলেছিলেন উনার সন্তানদের দিকে যদি কোন বুলেটও ছুটে আসে উনি আগে বুক পেতে ঐ বুলেটের আঘাত নিয়ে নিবেন।

সবসময় একটা কথা শুনি সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন এমনকি আমাদের বাবামায়ের চেয়েও বেশী যেহেতু আমরা উনার ই সৃষ্টি। আমিও বিশ্বাস করি উনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু তবু মনে প্রশ্ন জাগে-

যখন পাকিস্থানের জয়নাব আনসারী( ৬বছর), ভারতের আসিফা বানু( ৮বছর), বাংলাদেশের আয়েশা মনি( ২বছর) সামিয়া আফরিনকে( ৭বছর) ধর্ষন করে যন্ত্রনা দিতে দিতে খুন করা হচ্ছিলো তখন বাচ্চাগুলো চিৎকার করতে করতে কাকে ডাকছিলো? নিশ্চয়ই ওদের বাবা মাকে। আমার বাচ্চারাও না সামান্য ব্যাথা পেলে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে কিংবা ওদের বাবাকে ডাকে। মৃত্যুর আগে যখন ধর্ষিত হচ্ছিলো ঐ বাচ্চাগুলোও একইভাবে বাবা মাকে ডাকতে ডাকতে কাঁদছিলো আমি নিশ্চিত।

হিন্দু হোক কিংবা মুসলিম যখন একটি বাচ্চা ছেলেকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে কিংবা ধর্ষন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় তখন ঐ বাচ্চাটা কি পাগলের মতো বাবা মায়ের জন্য কাঁদতে থাকেনা? হ্যাঁ সে বাবা-আ-আ-আ কিংবা মা-আ-আ-আ বলেই কাঁদে। কেনো জানি মনে হয় ঐ কান্নায় গাছের পাতা, পায়ের নীচের মাটিও কাঁদে।

আচ্ছা কেউ কি এক মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে আপনার সন্তানের ঐরকম একটা কান্না কল্পনা করতে পারবেন? আমি নিশ্চিত কেউ এক মিনিট শেষ করতে পারবেন না। সম্ভব না। তাহলে সৃষ্টিকর্তা কিভাবে পারেন?

যে শিশু কিংবা শিশুগুলো ধর্ষিত এবং খুন হয়েছিলো ওদের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে ওরা মৃত্যুর আগে বাবা মাকে ডেকে কেঁদেছে সৃষ্টিকর্তাকে নয়। অবুঝ বাচ্চাতো তাই বুঝে নাই বাবা মা যতোই ভালোবাসুক না কেনো তাদের ক্ষমতার একটা সীমা আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা তো অসীম। দ্রৌপদী আর ইউসুফ নবী ভগবান কৃষ্ণ এবং আল্লাকে বিপদের সময়ে ডেকে কেমন দ্রুত থেকে দ্রুততম সার্ভিস পেয়েছিলো অবুঝ নিরীহ বাচ্চাগুলো কি আর ওসব জানে কিংবা বোঝে।

কিন্তু ভারতের নির্ভয়া( ২৩বছর), বাংলাদেশের রুপাকে( ২২/২৩বছর) যখন চলন্ত বাসের মধ্যে ধর্ষন করে জন্তু জানোয়ারের মতো খাবলে খাবলে মারা হচ্ছিলো ওরাতো তখন নিশ্চয় আল্লাহ গো, ও আল্লাহ কিংবা ভগবান বাঁচাও বলে চিৎকার করে সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের জন্য কাঁদছিলো। তাহলে সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে কেনো দ্রৌপদী আর ইউসুফ নবীর মতো দ্রুত উদ্ধার করলেন না? কেনো করলেন না?
ভগবান কৃষ্ণের কাছে দৌপদীর কান্না কি নির্ভয়ার চিৎকারের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ছিলো?

বাবা মা সন্তানের জন্য বুকে বুলেট নিতে পারে।
নিজেরা মরে যাবে তবু সন্তানের রক্ত ঝরতে দিবেনা কোনদিন। আর নিজের সন্তান বাদ দিলাম আমি একজন অতি সামান্য ক্ষমতার মানুষ যদি দেখি কেউ কোন বাচ্চার সাথে অন্যায় করছে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো প্রতিরোধ করার তবু কোনদিনও এরকম অন্যায় মেনে নিবোনা।
তাহলে সৃষ্টিকর্তা কেনো ঐ নিরীহ মানুষগুলোর আর্তনাদ শুনলেন না? ধর্মগ্রন্থগুলোতে তো লিখা আছে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার কারনে কতো মানুষকে তিনি ঝটপট সাহায্য করেছেন। তাহলে কেনো নির্ভয়া, রুপাকে বিনা দোষে এতো অসহ্য যন্ত্রনা পেয়ে মরতে দিলেন?

প্রিয় মুমিন মুসলিম এবং হিন্দু মুমিন ভাইয়েরা নিশ্চয়ই বলবেন স্রষ্টা পৃথিবীতে ঐ নিরীহ নিহত মানুষগুলোর পরীক্ষা নিয়েছেন বিনিময়ে মৃত্যুর পর জান্নাত কিংবা স্বর্গে পুরস্কার আর পুরস্কারে তাদের ভরিয়ে দেওয়া হবে।

সিরিয়াসলী, দুই বছরের দুধের বাচ্চা আয়েশা মনির এইটুকু শরীরটার উপর ধর্ষন এবং হত্যার মতো অত্যাচার করিয়ে সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা নিয়েছেন?

সিরিয়া, প্যালেস্টাইনের বাচ্চাগুলোকে তাদের বাবা মায়ের সামনে বোমায় ঝাঁজরা হতে দিয়ে,
ছোট ছোট রিফিউজি বাচ্চাগুলো কে তাদের বাবা মায়ের সামনে সাগরে ডুবে মরতে দিয়ে,
ইয়েমেন, সোমালিয়ার শিশুগুলোকে ক্ষুধার কষ্টে নি:শ্বাস ত্যাগ করতে দিয়ে,
সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা নিয়েছেন শুধু পরকালে তাদের অনেক লোভনীয় পুরস্কার দিবেন এই কারনে?

তাহলে ইউসুফ নবী আর দ্রৌপদীকে কেনো উদ্ধার করলেন? ওদেরকেও কেনো পরীক্ষা নিলেন না? একটু সর্বনাশ হলে কি সমস্যা হতো ওদের। অনন্তকাল তো উনারা জান্নাতে পুরস্কার আর পুরস্কারের উপর লুটোপুটি খেতে পারতেন।

প্রিয় মুমিন মুসলিম এবং হিন্দু মুমিন ভাইয়েরা যদি এটা বলেন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা/মর্জি কিংবা পরিকল্পনা উনি কাকে সাহায্য করবেন কিংবা করবেন না। তাহলে আমি বলবো ভাই, এটা লটারী কেনার মতো হয়ে গেলো না। কিনলাম কপালে থাকলে উঠবে। বিপদে স্রষ্টাকে ডাকলাম। উনার পরিকল্পনা থাকলে বাঁচাবে নইলে না।

তাই সত্যি জানতে ইচ্ছা করছে সৃষ্টিকর্তা ঠিক কার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button