সৃষ্টিকর্তা

ঈশ্বর আপনি থাকলে আমার জন্য গর্ব করতে বাধ্য হবেন

প্রিয় ঈশ্বর, আপনি সর্বশক্তিমান অসীম ক্ষমতার অধিকারী। আপনি কোটি-কোটি ধরনের মহাবিশ্ব বানানোর ক্ষমতা রাখেন, আপনি কি পারতেন না এই মহাবিশ্বকে এমন ভাবে তৈরি করতে যেখানে ন্যূনতম দুঃখ কষ্ট থাকত। এই পৃথিবীতে অনেক অপ্রয়োজনীয় দুঃখ-কষ্ট বিদ্যমান । ক্ষুধার্ত শাবকদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য মা চিতাকে একটি হরিণ শিশুকে মাতৃহারা করতে হচ্ছে। অসংখ্য পশুপাখি দাবানলে প্রাণ হারাচ্ছে। ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যা, খরা মানুষের জীবনকে বিধ্বস্ত করে চলেছে। ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশু দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। আপনি কি পান যখন মা-বাবা তাদের ছোট্ট শিশুটিকে ভয়ঙ্কর অসুখে কষ্ট ভোগ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেন। এই অপ্রয়োজনিয় কষ্টভোগ কি আবশ্যক

ছিল, এই জগতে কি দুঃখ কষ্টের অভাব ছিল, যে আপনি আবার মৃত্যুর পর মানুষকে চিরস্থায়ী শাস্তি দেয়ার জন্য নরক প্রস্তুত করেছেন। আপনি সর্বজ্ঞ, সৃষ্টির পূর্বেই আপনি জানতেন কারা নরকের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হতে চলেছে তাহলে কেন তাদের সৃষ্টি করলেন? জেনে শুনে কেন তাদের নরকের আগুনের দিকে ঠেলে দিলেন? তাদের যন্ত্রণা দেয়াইকি আপনার উদ্দেশ্য ছিল? যদি কোন পিতা-মাতা জেনে থাকে যে তাদের সন্তান একটির যন্ত্রণাময় জীবন কাটাতে চলেছে তাহলে কি তারা জেনে শুনে সেই সন্তানের জন্ম দেবে আপনি পরম দয়ালু তবু কেন মানুষকে তার একটি মাত্র ভুল সিদ্ধান্তের জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি

দেবেন? আমি জানি আমি জীবনে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সম্ভবত ভবিষ্যতেও নেব, হয়তো আপনার অস্তিত্বকে অস্বীকার করার আমার এই সিদ্ধান্তটি ও ভুল। এই একটি মাত্র ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই কি আমি নরকের চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করার যোগ্য? আর যদি নিশ্চিত ভাবে জানতাম যে আপনি সত্যি বিদ্যমান তাহলে কি আমি তাহলেকি আমি কখনোই নিজেকে ও আমার প্রিয়জনদের নরকের মত কঠিন যন্ত্রনাদায়ক স্থানের দিকে ঠেলে দিতাম?

যদি কেউ এসে আমার মাথায় বন্দুক ধরে আমাকে তার সামনে মাথা নত করার আদেশ করেন, তাহলে আমি বাচার জন্য তা করব। ঈশ্বর আপনিও কি তা করছেন না? আপনিও কি আমাদের নরকের শাস্তির ভয় দেখিয়ে বলছেন না আমার উপাসনা করো, আপনি আমাদের এমন ভাবে কেন সৃষ্টি করেছেন যেখানে বেশিরভাগ মানুষই আপনার মনোনীত ধর্ম প্রত্যাখ্যান করে, হোক না সেটি ইসলাম, হিন্দুধর্ম, খ্রিষ্ট ধর্ম বা অন্য কোন ধর্ম । যদি চাইতেন যে মানুষ জানুক আপনি আছেন আপনি সহজেই আমাদের এমন ভাবে তৈরি করতে পারতেন যাতে আমরা জন্ম থেকেই আপনাকে বিশ্বাস করি। তার পরিবর্তে

আপনি আমাদের থেকে লুকিয়ে থাকেন, স্পষ্টভাবেই আপনার নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ । এই কারণেই এই পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম ও ধর্মের মধ্যে উপদলের সৃষ্টি হয়েছে যারা সর্বদা একে অপরের সাথে লড়াই করে চলেছে। এটাই কি আপনার পরিকল্পনা ছিল? যেখানে একজন মানুষকে তার সীমিত জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করে আপনার মনোনীত ধর্ম খুজতে হবে এবং যদি সে ভুলবশত ভিন্ন ধর্ম বেছে নেয় তাহলে মৃত্যুর পর তাকে চিরস্থায়ী যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। হে ঈশ্বর আপনার এই পরিকল্পনায় আমি খুব হতাশ হয়েছি। এই মহাবিশ্বকে দেখে মনে হয় এটি একটি

সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নয় বরং অন্ধ প্রাকৃতিক ঘটনার দ্বারা সৃষ্ট । এই মহাবিশ্বকে দেখে এমন কেন মনে হয় যে এই মহাবিশ্বে ঈশ্বরের কোনো প্রয়োজনই নেই, কিছু ভন্ড সুবিধাবাদী মানুষ আমাদের আপনার নাম করে স্বর্গের লোভ এবং নরকের ভয় দেখিয়ে তাদের কথা মানতে তাদের হয়ে কাজ করতে এমনকি তাদের জন্য জীবন দিতেও আমাদের বাধ্য করে। আমি আমার সাধ্যমত সুন্দরভাবে জীবন যাপন করব, আমি বাঁচবো নিজের জন্য, আমার প্রিয়জনের জন্য, আমার দেশের জন্য এবং মনুষ্যত্বের জন্য। না, স্বর্গের লোভ বা নরকের ভয়ে নয় বরং এই কারণে যে আমি সকলের কল্যাণ কামনা করি, আমি এমন জীবন যাপন করব যাতে আপনি আমার জন্য গর্ব করতে বাধ্য হবেন যদি আপনি সত্যি থেকে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button