ধর্ম

আপনি সারা জীবন কোনো পাপ না করে ভালো কাজ করলেও জান্নাত এ যেতে পারবেন না

সম্মানিত সুধিমন্ডলী, আজকে আমি কুরআনের একটি সূরার দুটো আয়াত নিয়ে হাজির হয়েছি এবং এই দুইটা আয়াত মোতাবেক আমি আলোচনা করে প্রমাণ করে দেখাব যে, আল্লাহ সকল পাপিষ্ট মুসলিমদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন এবং সকল মানবতাবাদী অমুসলিমদেরকে জাহান্নামের আগুনে চিরজীবনের জন্য নিক্ষেপ করে দেবে। তাহলে কথা না বাড়িয়ে আমি আয়াত দুটো আপনাদের সামনে হাজির করি এবং এই আয়াত দুটো আপনাদের সামনে তুলে ধরে আমি এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবো।

প্রথম যে আয়াত আমি আপনাদের সামনে হাজির করেছি সে আয়াতটি হচ্ছে সূরা ৪৭ এর ১ নম্বর আয়াত। দেখুন এই আয়াতে বলা হয়েছে, যারা কুফরী করেছে অর্থাৎ, আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে এবং মোহাম্মদের ধর্ম মানে নাই এবং আল্লাহর পথ থেকে বারণ করেছে তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এই আয়াতের ক্লিয়ার ইংলিশ আমি আপনাদেরকে পড়ে শুনাই দেখুন এর ইংলিশটা পড়ে শুনালে আপনাদের জন্য বিষয়টা আরো বেশি মেইক সেন্স করবে । দেখুন এখানে বলা হয়েছে ‘Those who disbelieve and avert [people] from the way of Allah- He will waste their deeds’ এটার মানে হচ্ছে যে, যারা ইসলামে অবিশ্বাসী হবে তাদের সকল ভালো কাজকে আল্লাহ ব্যর্থ করে দেবেন ।

অর্থাৎ, তাদের কোন ভালো কাজের পুরস্কারই দেওয়া হবে না, ঠিক আছে। এর মানে হচ্ছে পৃথিবীতে যত বড় বড় বিজ্ঞানী, অমুসলীম বিজ্ঞানী কবি, সাহিত্যিক, তারপর স্কলার রয়েছেন এদের কোন ভাল কর্মকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন আমলেই নিবেননা । এমনকি তাদের এই সমস্ত ভালো কাজগুলোকে কিয়ামতের দিন ওজন পর্যন্ত করা হবে না। এরা বেহিসাব, বিনাহিসাব, জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। তো এই আয়াত মোতাবেক মানব জাতির কল্যাণ যে সমস্ত বড় বড় বিজ্ঞানীরা করেছেন এরা সবাই জাহান্নামী হবেন, কারণ এই সমস্ত বড় বড় বিজ্ঞানীরা হচ্ছে অমুসলিম বেশিরভাগ হচ্ছে ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ এবং বহু বিজ্ঞানী রয়েছেন যারা মানবজাতির কল্যাণ সাধন করেছেন তাদের বিভিন্ন আবিষ্কারের

মাধ্যমে এরা সবাই জাহান্নামে যাবে। যেসমস্ত বিজ্ঞানী যেমন রাইট ব্রাদার্স এরোপ্লেন আবিষ্কার করেছে যে এরোপ্লেনের মাধ্যমে আব্বাসি হুজুর বা অন্যান্ন হুজুররা বাংলাদেশের একজায়গায় বা অন্যযায়গায় উড়ে উড়ে গিয়ে বা এরোপ্লেন থেকে নেমে মানুষের কাছে ওয়াজ করে থাকে । এই এরোপ্লেন এর আবিষ্কারক রাইট ব্রাদার্সরা জাহান্নামের আগুনে জলতেছে তারা এরোপ্লেন আবিষ্কার করে মোল্লা মৌলভী দেরকে ওয়াজ করার পথ সুগম করে দিল এর জন্য কিন্তু তারা জান্নাতে যাবে না মোল্লা মৌলভীরা নাকি জান্নাতে যাবে কিন্তু রাইট ব্রাদার্স দুই ভাই এরোপ্লেন আবিষ্কার করেছে তারা কিন্তু এই আবিষ্কার করে যে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করেছে এর জন্য তাদেরকে জান্নাতে যেতে দেওয়া হবে না। তাদের কোন পারমিশন নাই।

এইভাবে যেসমস্ত নাস্তিক কাফের এবং ইহুদি খ্রিস্টান সেইসাথে অন্যান্ন অমুসলিমরা বড় বড় জিনিস আবিষ্কার করে মানুষের কল্যাণ সাধন করেছে তাদের এই কল্যাণ সাধনের পুরষ্কার আল্লাহতালা দেবেননা।
বরং তাদের জাহান্নামের আগুনে ফাটিয়ে দেবে। অনন্তকাল তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। কারণটা কি? কারণ হচ্ছে তারা ইসলামকে অবিশ্বাস করেছে নবী মোহাম্মদকে নবী হিসেবে স্বীকার করে নাই। এখন দেখুন মাদার তেরেসা জাহান্নামে যাচ্ছেন । উনি সারা জীবন মানবতার কাজ করে গেছেন, কিন্তু এগুলোর কোন পুরস্কার পাবেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে তারপর আইনস্টাইন জাহান্নামের আগুনে জ্বলছেন, আইনস্টাইন, আলভা এডিসন জাহান্নামের আগুনে জ্বলছেন, নেলসন মেন্ডেলা জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে, এদের সবার ভাল কাজগুলো আল্লাহ ব্যর্থ করে দিয়েছে, সেগুলো আল্লাহ হিসাবেই নিবেননা।

কিন্তু যে সমস্ত মুমিন-মুসলমানরা এই সমস্ত বড় বড় মানুষের অবদান কে পুঁজি করে পৃথিবীতে ফায়দা হাসিল করতেছে, এরা কিন্তু জান্নাতে যাবে এরা জাহান্নামে যাবে না। এখন দেখুন আইনস্টাইন জীবনে কাউকে ধর্ষণ করেন নাই, মাদার তেরেসা টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেন নাই, তারপর এই যে নেলসন ম্যান্ডেলা নিজের দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন এরপরে আরো যারা অমুসলিম জ্ঞানী আছেন কবি-সাহিত্যিক আছেন, তারপর হিউমেন রাইট অ্যাকটিভিটস আছেন এরা কিন্তু মানুষের কল্যাণই করে গেছেন এরা কিন্তু কাউকে ধর্ষণ করেন নাই, কারো কাউকে খুন খারাবি করেন নাই কারো মাল-সামানা আত্মসাৎ করেন নাই এগুলো না করা সত্ত্বেও এ সমস্ত অপরাধ না করা সত্ত্বেও এরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে, একটামাত্র অপরাধ তারা ইসলামকে স্বীকার করে নাই। আর যে সমস্ত হুজুররা দিন রাত 24/7 মানুষের অকল্যাণ করেছে

সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে তাদের তাদের ওয়াজ মাহফিল গুলতে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে এরা সবাই কিন্তু জান্নাতুল ফেরদৌসে যাবে এরা যদিও মানুষের কোন কল্যাণ করে নাই এর পরেও এরা জান্নাতে যাবে একটামাত্র কারণে যে তারা ইসলামকে ফলো করেছে। এখন এরা যদি বড় বড় আকাম-কুকামও করে থাকে এর পরেও কিন্তু তারা জান্নাতে যাবে কিন্তু যে সমস্ত অমুসলিমরা কোন আকাম-কুকাম জীবনে করেই নাই একটা মাত্র আকাম কুকাম করে নাই তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পাঠানো হবে নিক্ষিপ্ত করা হবে কারণ তারা ইসলাম কবুল করেনাই, এই হচ্ছে তাদের অপরাধ।

এটিকে আল্লাহ অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন এবং এর শাস্তিস্বরূপ তারা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে,কারন আল্লাহর দৃষ্টিতে অপরাধ। আল্লাহর দৃষ্টিতে একটা অপরাধ করার কারণে তাদেরকে সবাইকে জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল আল্লাহ পুড়িয়ে পুড়িয়ে রোষ্ট করবেন, ঠিক আছে। একটা অপরাধ যেটা আল্লাহর কাছে অপরাধ কিন্তু আমাদের কাছে অপরাধ না, একটা অপরাধের কারণে তারা শাস্তি পাবে কিন্তু বাকি নিরানব্বই হাজার সৎকর্মের জন্য আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন না।

এইবার আসি আমি দুই নম্বর আয়াতে, এই সুরা মোহাম্মদের দুই নম্বর আয়াত, অর্থাৎ চাপ্টার ৪৭ এর দুই নম্বর আয়াতে। এই আয়াত মোতাবেক সকল চোর ডাকাত ধর্ষক খুনী মুমিনরা বেহেশতে যাবে, ঠিকআছে, তারা একসময় জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ে রোস্ট হওয়ার পরেও দিনশেষে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি পাওয়ার পরে জান্নাতুল ফেরদৌসে পৌঁছাবে। এইটা হচ্ছে তাদের কথা কিন্তু এর পরেও আর একটি কথা থেকে যায় এই আয়াত মোতাবেক সেটি হলো, যে আপনি যদি কাফের হয়ে থাকেন অমুসলিম হয়ে থাকেন আর সারা জীবন যদি আপনি খুনখারাবি, ধর্ষণ, লুটতরাজ, মানি রাহাজানি, সন্ত্রাস করে থাকেন, আর মুসলমান হয়ে যান যদি, আল্লাহর প্রতি যদি ঈমান আনেন তাহলে কিন্তু আপনার পূর্ববর্তী সকল ক্রাইমকে মাফ করে দেওয়া হবে, তো আমি পড়ে শোনাই এই আয়াতটি, যারা ইমান এনেছে অর্থাৎ,যারা

অমুসলমান হতে মুসলমান হয়েছে সৎকর্ম করেছে এই সৎকর্ম মানে হচ্ছে নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, বিভিন্ন জায়গায় অ্যাটাক করে গনিমতের মাল হাসিল করা, দাসী বান্দিদের সাথে সহবাস করা এগুলো হচ্ছে সৎকর্ম এবং মুহাম্মদ এর প্রতী যা নাযিল করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে আর তাদের রবের পক্ষ হতে প্রেরিত সত্য গ্রহণ করেছে তিনি তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজ গুলোকে দূর করে দেবেন। এই দেখুন ‘মন্দকাজ’ গুলোকে দূর করে দেবেন এবং তিনি তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন। অর্থাৎ যে সমস্ত মুমিনরা আগে অমুসলিম ছিল এবং অমুসলিম থাকা অবস্থায় যত ধরনের ক্রাইম করেছে, বড় বড় ক্রাইম করেছে সবগুলোকে আল্লাহ কি করে দেবেন, ডিলিট করে দেবেন এবং তাদেরকে পুতপবিত্র করে ফেলবেন।

অর্থাৎ, তারা যে ইতিপূর্বে যে সমস্ত অন্যায় কাজগুলো করেছে, সে অন্যায় কাজ গুলোর বিচার আল্লাহ কেয়ামতের দিন করবেননা। ওয়াও, চিন্তা করে দেখেছেন, অথচ যারা কোন অন্যায় কাজ করেই নাই যে সমস্ত অমুসলিমরা বড় বড় অমুসলিমরা, পৃথিবী বিখ্যাত বড় বড় অমুসলিমরা সারা জীবনে কোন অন্যায় কাজ করেনাই, একটা মশা মাছি পর্যন্ত মারেনাই, তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনে প্রেরন করবে অন্যায় না করা সত্যেও। আর যে সমস্ত মুমিনরা সারা জীবন

অমুসলিম থাকা অবস্থায় অন্যায় কাজ করেছে শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারনে আল্লাহ তাদের সকল অন্যায় কাজকে মাফ করে দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে। বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। এটাকি ভয়ংকর কথাবার্তা না? তো এটার একটু ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করি। দেখুন এখানে বলা হয়েছে, যদিও বিশ্বাস ও ইমান আনার মাধ্যমে মোহাম্মদের প্রতি প্রেরিত অহি অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের উপর ঈমান আনার শামিল, তবুও এর গুরুত্ব ও মর্যাদাকে আরো বেশী স্পষ্ট করার জন্য এটাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন নবী করিম (সা.) বলেছেন ইসলাম পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে দেয় (সহীহুল জামে, আলবানী)।
তো তাদের পাপাচার গুলোকে আল্লাহ কি করবেন মুছে দিয়ে তাদের সব কাজকে মঙ্গল ময় করে দিবেন। তো এর থেকে বোঝা যায় একজন মানুষ হাজার হাজার অপরাধ করার পরে যদি সে মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার এই হাজার হাজার অপরাধগুলোর বিচার করবেন না।

ধরুন একজন অমুসলিম ৯ শ টা ধর্ষণ করেছে, ৯ শটা ধর্ষণ করার পরে আল্লার প্রতি ঈমান এনে ইসলাম কে কবুল করে নেন তাহলে তার এই ৯শ টা ধর্ষণের বিচার হবেনা। অর্থাৎ, এই ৯শতটা ধর্ষিতা নারীর ফরিয়াদ আল্লাহ শুনবেননা এবং বিচার করবেননা এর কারন হচ্ছে কি? কারন হচ্ছে সে মুসলমান হয়েগেছে, আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং তাকে জান্নাতে পৌছাইয়া দিবেন। এইবার ধরেন আইনস্টাইনের কথায় আসেন, আইনস্টাইন এতবড় বিজ্ঞানি তিনি সারাজীবন মানুষের কল্যান সাধন করে গেছেন বিজ্ঞানের অবদান রাখার কারনে, কিন্তু তার এই সারাজীবনের কল্যানে অবদান রাখার জন্য

পুরষ্কার আল্লাহ তাকে দিবেননা শুধু মাত্র একটি অপরাধে সেটি হচ্ছে তিনি ইসলাম কবুল করেন নাই এবং এর জন্য তিনি জাহান্নামের আগুনে পুরবেন অনন্ত কালের জন্য এবং এখান থেকে বের হবার কোন রাস্তা নেই। এই হচ্ছে আমার কথা এই হচ্ছে আল্লাহ। এই আল্লাহকে কি আল্লাহ বলে মানা যায়? সে মানুষের কোন ভাল কাজেরই পুরষ্কার দেয়না সে যদি মুসলমান না হয়ে থাকে, এই আল্লাহ কি সাম্প্রদায়িক না? এই আল্লাহ কি বিশ্বজনীন?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button